আপেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আপেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে এই পোস্টটি লিখা। আমরা কমবেশি সকলেই আপেলের সৌন্দর্য এবং সুস্বাদু হওয়ার কারণে অনেকে আপেল খেয়ে থাকি। নিয়মিত আপেল খেলে শরীরের কি কি উপকার হয় এই বিষয় নিয়ে এই পোস্টে আলোচনা করা হবে।
আপেলে রয়েছে নানা ধরনের পুষ্টিগুণ। এবং আপেল খেতে অনেক সুস্বাদু পাশাপাশি আমাদের পেট ভরাতে আমরা আপেল খেতে পারি। আমাদের যদি ক্ষুধা লাগে তখন আপেল খেলে ক্ষুধা নিবারণ হয়ে যায় এবং আমরা অনেক স্বস্তিবোধ করি। এবং পাশাপাশি আমাদের নানা ধরনের উপকার সাধন হয়ে থাকে। তো চলুন আপেল নিয়ে এই পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
সুচিপত্রঃ আপেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- আপেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা
- আপেলের উপকারিতা সমূহ
- সঠিকভাবে আপেল খাওয়ার নিয়ম
- আপেল খাওয়ার সঠিক সময়
- আপেল খাওয়ার কিছু অপকারিতা
- শেষ মন্তব্য
আপেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা
আপেল পৃথিবী জুড়ে একটি জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু ফল। যেই ফলে নানা ধরনের পুষ্টিগুণ এবং উপকারী উপাদান রয়েছে। বিদেশে এমন একটি প্রবাদ ও আছে যে, প্রতিদিন একটি আপেল খাওয়ার মাধ্যমে ডাক্তারকে দূরে রাখা যায়। তো বুঝতেই পারছেন যে আপিল শরীরের জন্য কতটা উপকারী এবং এতে কত পুষ্টি উপাদান আছে যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আপেলে রয়েছে নানা ধরনের ভিটামিন, ফাইবার, পটাশিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে পাশাপাশি নানা ধরনের এন্টিবডি তৈরি করে। আপেল খাওয়া পেট,লিভার এবং হার্টের জন্য অনেক উপকারী। নিয়মিত একটি আপেল খেলে অনেক ধরনের সমস্যার কারণে আপনার ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না। বিশেষ করে লিভারকে ভালো রাখতে তো আপনার প্রত্যেকদিন একটি করে অন্তত আপেল খেতেই হবে। তো চলুন আপেলের সকল উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করি।
আপেলের উপকারিতা সমূহ
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
আপেলে থাকা উচ্চ পরিমাণের ফাইবার, বিশেষ করে পেকটিন আমাদের শরীরের হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কার্য সাধন করে থাকে। এটি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক করে যা হৃদরোগের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত আপেল খাওয়ার ফলে বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানো সম্ভব হৃদরোগ থেকে সুরক্ষা দেয়
লিভার সুস্থ রাখে এবং হজম শক্তি বাড়ায়
প্রতিদিন আপেল খাওয়ার ফলে আপনার হজম শক্তি উন্নত হয়। কারণ আপেলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা হজম প্রক্রিয়াকে সাহায্য করে এবং দ্রুত হজম করতে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এবং লিভার থেকে বাজে পদার্থগুলো ডিটক্স করে লিভারকে ফ্রেস রাখে।
ওজন কমাতে আপেল
আপেলে ক্যালরি থাকে অনেক কম। কিন্তু এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা আপনার শরীরের অতিরিক্ত খাবারের জন্য খোদার অনুভুতি কমায়। এটি আপনাকে দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভর্তি রাখতে সাহায্য করে ফলে আপনার অতিরিক্ত খাবারের চাহিদা কমে যায়। এবং আপেলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকার কারণে এটি ধীরে ধীরে হজম হয় এবং শরীরে দীর্ঘ সময় ধরে শক্তি সরবরাহ করে থাকে। যার ফলে অতিরিক্ত খাবার না খেয়ে আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করে।
ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে
আপেলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আমরা সবাই জানি যে ভিটামিন সি আমাদের শরীরের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে আমাদের শরীরকে নানা রোগ থেকে সুরক্ষা করে।
এবং পাশাপাশি আপেলে থাকা কিছু এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান গুলি শরীরকে সংক্রমণ রোগ থেকে রক্ষা করে থাকে।
ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী
আপেলে থাকা ভিটামিন সি আমাদের ত্বককে সুস্থ রাখে এবং ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়। আর কোলাজেন উৎপাদন সঠিক থাকলে আমাদের ত্বক টানটান উজ্জ্বল এবং সুন্দর দেখায়। এবং আপেলে থাকা এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের সূর্যের ক্ষতিকর রশী থেকে রক্ষা করে থাকে।
আপেল চুলের জন্যও উপকারী। এটি চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবং চুলের বৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। আপেলে থাকা ফাইবার এবং পানি উপাদান চুলের আদ্রতা ধরে রাখে চুল পড়া কমায়।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
আপেলে থাকা নানা ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরকে ক্যান্সার রোগের কোষ নষ্ট করতে সাহায্য করে। এবং আমাদের শরীরের ক্যান্সারের ভাইরাসের কারণে অনেক ধরনের কোষের ক্ষতি রক্ষা করতে আপেল সহযোগিতা করে থাকে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিয়মিত আপেল খাওয়া স্তন ক্যান্সার,লাঞ্চ ক্যান্সার এবং বৃহদান্ত্র ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
মনোভাবের উন্নতি এবং স্ট্রেস কমায়
আপেলে থাকা ভিটামিন বি ৬ এবং অন্যান্য মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট আমাদের শরীরের সেরোটোনিন এবং ডোপামিনের উৎপাদন বাড়ায়, যা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কারণ ডোপামিন আমাদের মানসিক শান্তি প্রদান করে থাকে পাশাপাশি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও, আপেলে থাকা প্রাকৃতিক সুগন্ধি আমাদের মনোভাবের উন্নতি ঘটায়।
শরীর থেকে টক্সিন পরিষ্কার
প্রথমদিকে একটু আলোচনা করেছিলাম যে আপেল খাওয়ার ফলে আমাদের শরীর থেকে নানা ধরনের কর্তিকর টক্সিন পদার্থ বের করে দেয়। যার ফলে আমাদের লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। এবং শরীরের নানা রোগ ব্যাধি দূরে থাকে।
এজন্য এত উপকার নিতে হলে আমাদের নিয়মিত কমপক্ষে একটি করে আপেল অবশ্যই খেতে হবে। তাহলে আমাদের শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে আমাদের শরীরের হজম প্রক্রিয়া সঠিক রাখে এবং নানা ধরনের ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরকে সতেজ এবং সুস্থ রাখবে। এবং নিয়মিত আপেল খাওয়ার ফলে আপনার ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না।
সঠিকভাবে আপেল খাওয়ার নিয়ম
আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি যে আপেলের নানা পুষ্টিকর এবং উপকারীর দিক সম্পর্কে। এবং আপেল খেতে সুস্বাদু হওয়ার পাশাপাশি এটা আমাদের ক্ষুধা নিবারণও করে। তবে আপেল সঠিক নিয়মে খাওয়া হলে আমাদের শরীরে আরও বেশি উপকার সাধন হবে। তো চলুন আপিল খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানি।
১ আপেল পরিষ্কার করুন
বাজারে বিক্রি হওয়া আপেলে নানা ধরনের কীটনাশক এবং রাসায়নিক উপাদান থাকতে পারে, যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এই জন্য আপেল খাওয়ার আগে ভালোভাবে পানি দিয়ে আপেলটি ধুয়ে নিতে হবে। আর আপেল কিনার সময় একটু খেয়াল রাখবেন পরিষ্কার এবং টাটকা আপেল কিনার জন্য।
২ আপেলের খোসা সমেত খাওয়া
আপেলের খোসা অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার পাশাপাশি আন্টি অক্সিডেন্ট থাকে। যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই এন্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীর থেকে কোলেস্টেরল কমায় এবং হজম করতে সাহায্য করে। এজন্য চেষ্টা করবেন যে আপেলের খোসা না ছাড়িয়ে খোসার সমেত খাওয়ার জন্য।
আপেল খাওয়ার সঠিক সময়
আপেল খাওয়ার তেমন একটা নির্দিষ্ট কোন সময় নেই, তবে কিছু সময় নিয়ম মেনে আপেল খেলে বেশি উপকার পাওয়া যেতে পারে। তো চলুন এই বিষয় নিয়ে একটু আলোচনা করি।
*সকালে খালি পেটে আপেল খাওয়া আপনার শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এটি পাচনতন্ত্রকে সচল করে শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। এবং দিনের শুরুতে আপনাকে শক্তি যোগায়।
*খাওয়ার আগে আপেল খেলে আপনার হজম শক্তিকে বৃদ্ধি করে পাশাপাশি আপনার লিভারকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
*বিকালে আপনি যখন ঘোরাঘুরি করতে যান অথবা খেলাধুলা করতে যান ওই সময় একটা আপেল খেয়ে আপনি যদি ঘোরাঘুরি করতে চান অথবা খেলাধুলা করেন। এটা আপনার শরীরের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী।
*আপনার খাবার খাওয়ার পর যখন হালকা হালকা ক্ষুধা লাগবে তখন যদি একটা আপেল খান আপনার খোদার নিবারণ হবে এবং অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় খাবার খাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। যা আপনার শরীরকে ফিট রাখতে এবং লিভারক সুস্থ রাখতে খুবই সাহায্য করে থাকে।
*অলস এবং মোটা লোকদের জন্য মাঝে মাঝে আপেল খাওয়া খুবই ভালো। কারণ মাঝে মাঝে আপেল খেলে তাদের অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগবে না যার কারণে তাদের শরীরকে তারা ফিট রাখতে পারবে এবং খোদাও নিবারণ হবে।
আপেল খাওয়ার কিছু অপকারিতা
বেশি পরিমাণে খাওয়া
আপেল যতই উপকারী হোক না কেন অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে এটা আপনার ক্ষতির কারণও হতে পারে। কারণ অতিরিক্ত আপিল খাওয়ার ফলে অতি শরীরের অতিরিক্ত ফাইবার প্রবাহিত হতে পারে যা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা পাশাপাশি নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আপেলের বিজ খাওয়া থেকে বিরত
আপেল যেমনি উপকারিতা তেমনি আপেলের বীজ অনেক বেশি ক্ষতিকর। আপেল খাওয়ার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যে আপেলের সাথে সাথে আপেলের বীজ যেন না খেয়ে ফেলেন এটি আপনার শরীরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
আপেল খাওয়ার সাথে সাথে পানি না খাওয়া
আপেল খাওয়ার পর তৎক্ষণাৎ পানি না খাওয়া ভালো। শুধু আপেল নয় যে কোন ফল খাওয়ার পরে পানি খাওয়া অনেক বাজে একটা অভ্যাস। আপেলে প্রচুর পরিমাণে এমনিতেই পানি থাকে তাই আপেল খাওয়ার পর পানি খেলে শরীরে পেট ফুলে যেতে পারে বা হজমে নানা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য আপেল খাওয়ার তিরিশ মিনিট পরে পানি পান করা উত্তম।
যাদের ডায়াবেটিকস আছে
ডায়াবেটিসের রোগীদের আপেল খাওয়া থেকে সাবধান থাকতে হবে কারণ আপেলে প্রাকৃতিক চিনি থাকে যা অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিসের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।
শেষ মন্তব্য
আপেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে এই পোস্টটি সম্পূর্ণ আলোচনা করা হয়েছে। নিয়মিত একটি করে আপেল খেলে আপনার নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা থেকে সুস্থ থাকবেন। আপিলে তেমন একটা কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই তবে অল্প কয়েকটি অপকারিতা সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হয়েছে।
আপেলে অনেক পুষ্টিগুণ এবং শক্তি রয়েছে যা আপনার শরীরকে অনেক সুস্বাস্থ্য করতে সাহায্য করতে পারে। তবে অতিরিক্ত কোন জিনিসই ভালো না এজন্য সহজেই হজম করতে পারেন এরকম পরিমাণ নিয়মিত খাওয়ার চেষ্টা করুন আপনার শরীরকে ভালো রাখুন।
এখানে কমেন্ট করুন
comment url