কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা

কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা কমবেশি সবাই একটু একটু জানি। কিসমিস খাওয়ার আরও নানা ধরনের উপকারিতা রয়েছে। যেগুলো হয়তোবা আপনি জানেন না এই পোস্টটি পড়লে আপনি কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ কিছু জানতে পারবেন। 

কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা

কিসমিসে ভিটামিন ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি রয়েছে নানা ধরনের পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা। নিয়মিত কিসমিস খেলে আমাদের শরীরে নানা ধরনের ভিটামিনের অভাব দূর হয়। আমাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণে রক্ত উৎপাদন হয়। এবং এগুলোর পাশাপাশি কিসমিসে কি কি উপকারিতা রয়েছে এই পোষ্টের সম্পূর্ণ বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা 

কিসমিস ভেজিয়ে খেলে আমাদের শরীরে নানা ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তবে কিসমিস খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে যে নিয়ম গুলো মেনে কিসমিস খেলে আপনার শরীরে আরো বেশি প্রভাব ফেলবে। এবং আপনার শরীরে আরও বেশি পোস্টটি উৎপাদন করতে সক্ষম হবে। কিসমিসে রয়েছে নানাগণ পুষ্টি উপাদান তো এই কিসমিস সঠিকভাবে খাওয়ার জন্য আপনাকে কিছু নিয়ম অবশ্যই মেনে কিসমিস খেতে হবে। 

আপনি যদি কিসমিস ভিজিয়ে খান তাহলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাটি দূর হতে পারে এবং পাশাপাশি আপনার প্রচুর রক্ত উৎপাদন হবে। কিসমিস ভেজিয়ে খাওয়ার জন্য আপনার রক্ত পরিষ্কার করবে। এবং ভিজানো কিসমিস খেলে আপনার দেহে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়ামের উৎপাদন হবে যা আপনার ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য ক্যালসিয়ামের যেকোন সমস্যা জন্য আপনি কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন।

কিসমিস ভিজিয়ে খেলে কি কি উপকার হয়

১.হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে

কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা আমাদের অন্ত্রের চলাচল সহজ করে এবং হজমে সহায়তা করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।

২. রক্তস্বল্পতা দূর করে

 কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, কপার এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকে, যা রক্তের লোহিত কণিকার উৎপাদন বাড়ায়। তাই এটি রক্তস্বল্পতা দূর করতে সহায়ক।

৩. ইমিউনিটি সিস্টেম উন্নত করে

 কিসমিসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, যা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।

৪. হাড় মজবুত করে

কিসমিসে ক্যালসিয়াম এবং বোরন রয়েছে, যা হাড়ের গঠনে এবং তাদের মজবুত রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৫. কিডনির জন্য উপকারী

 কিসমিস কিডনি থেকে টক্সিন অপসারণ করতে সাহায্য করে এবং কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করে। এটি কিডনিতে পাথর জমার সম্ভাবনাও কমায়।

৬. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

কিসমিসে থাকা ফাইবার দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভর্তি রাখে, ফলে অতিরিক্ত খাওয়া কম হয়। এ কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

৭. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে

কিসমিসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের কোষের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এটি বলিরেখা ও কালো দাগ প্রতিরোধে সহায়ক।

৮. হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে

কিসমিসে থাকা পটাশিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

৯. মানসিক চাপ কমায়

কিসমিসে থাকা ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন বি আমাদের মনকে শান্ত রাখে এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে।

কিসমিসে এত উপকারী উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আপনি নিয়মিত কিসমিস খেলে আপনার শরীরে এইসব উপাদানের মধ্যে কোন একটি যদি ঘাটতি থাকে তাহলে আপনার শরীরে সেই উপাদানটি ফুলফিল হয়ে যাবে এবং শরীর মজবুত থাকবে।

কিসমিস কিভাবে ভিজিয়ে খাওয়ার সঠিক নিয়ম

কিসমিসের সম্পূর্ণ উপকারিতা পেতে হলে আপনাকে সঠিক নিয়মে ভিজিয়ে কিসমিস খেতে হবে। তো চলুন কিসমিস খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।

কিসমিস নির্বাচন 

আপনি কিসমিস খাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে কিসমিস কিনতে হবে। আর এই বিষয়টা আপনাকে খুব গুরুত্বসহকারে করতে হবে কারণ বাজারের নানা ধরনের ময়লা আবর্জনা যুক্ত অপরিষ্কার কিসমিস পাওয়া যায় যেগুলো আপনার শরীরের জন্য ক্ষতির কারণও হতে পারে। এজন্য কিসমিস কেনার সময় পরিষ্কার চকচকে ভালো মানসম্মত কিসমিস কিনতে হবে।

ভেজানোর পদ্ধতি 

প্রথমে কিসমিস গুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে যাতে কিসমিসে কোন ময়লা এবং কেমিক্যাল থাকলে তা দূর হয়ে যায়। এরপর পরিষ্কার একটি পাত্রে কিসমিস রাখতে হবে এবং তাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি যোগ করতে হবে। এবং তারপর কিসমিস গুলো চার থেকে ছয় ঘন্টা অথবা সারারাত ভিজিয়ে রাখতে পারেন এটি কিসমিস কে নরম করে।

 সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ওয়াশরুম থেকে এসে হাতমুখ ধুয়ে ভিজিয়ে রাখা কিসমিসের পানি ফেলে দিয়ে কিসমিস গুলো খেতে হবে। এবং আপনি চাইলে পানি সমেত খেতে পারেন তবে পানি সমেত খাওয়ার জন্য আপনাকে ভিজিয়ে রাখার সময় সুন্দর করে কিসমিস গুলো ধুয়ে এবং পরিষ্কার পানি দিতে হবে পানিসহ কিসমিস খেলে আপনার আরো কিসমিসের উপকারিতা বেড়ে যায়। এবং ভিজিয়ে রাখা পানিতে কিসমিসের কিছু ভিটামিন থাকে যা আপনার শরীরের জন্য উপকারী। 

 কিসমিস খাওয়ার আরো কিছু পদ্ধতি

কিসমিস ভেজানোকি আরো কার্যকর করতে আপনি আরো নতুন নতুন উপায় এবং কিসমিসের সাথে আরো কিছু মিক্স করে খেতে পারেন যা আপনার জন্য আরো উপকারী হতে পারে। তো চলুন এই বিষয়ে একটু আলোচনা করা যাক।

  • মধুতে কিসমিস ভিজিয়ে    খাওয়া আপনার শরীরের জন্য আরও বেশি উপকারী এবং পুষ্টিকর। কারণ কিসমিসের পাশাপাশি মধুতে ও নানা ধরনের ভিটামিন মিনারেলস এর পাশাপাশি রয়েছে নানা ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরকে নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধ করে এবং শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে। এজন্য কিসমিসের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য আপনি রাতে পানির বদলে মধুতে কিসমিস ভিজিয়ে রেখে সকালে কিসমিস সহ মধু খেয়ে নিতে হবে।  এই পদ্ধতি আপনার শরীরের হরমোনকে বুস্ট করে এবং শরীর শক্তি  বৃদ্ধি করে।
  • কিসমিস এবং আদা     পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে তারপরে রাতে ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে ওই পানি সহ কিসমিস খেয়ে ফেলুন।  কিসমিস ভেজানো পানিতে আদা দেয়ার কারণে আপনার সর্দি কাশি দূর হবে পাশাপাশি আপনার গ্যাসের সমস্যা উপশম হবে।  এবং পাশাপাশি কিসমিসের শক্তি বৃদ্ধি করে আপনার শরীর ভালো লাগবে।
  •  গরম পানিতে কিসমিস ভেজানো এই পদ্ধতিটা বিশেষ করে শীতের সময় অনুশীলন করা উচিত। হালকা হালকা কুসুম গরম পানিতে রাতে কিসমিস ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই কিসমিস খেলে আপনার অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগা ভাব দূর হবে এবং শীতের সময়ে এই পদ্ধতিতে অবলম্বন করলে আপনার সর্দি কাশি হবে না।

কিসমিস কাদের জন্য ক্ষতিকর

কিসমিসে নানা  পুষ্টি উপাদান রয়েছে যেটা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। তবে কিছু মানুষের জন্য কিসমিস ক্ষতি কারণ হতে পারে এ বিষয়টা একটু জেনে নিন।

 ডায়াবেটিস রোগী    ডায়াবেটিসের রোগীরা কিসমিস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ কিসমিসের প্রচুর পরিমাণে  গ্লুকোজ এবং প্রাকৃতিক সুগার থাকে যারা ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিস বাড়িয়ে দেয় এজন্য  ডায়াবেটিস এর রোগীরা কিসমিস খাবেন না

 আইবিএস আছে যাদের তারা কিসমিস খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কারণ কিসমিসে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার আছে যা আইবিএস এর রোগীদের হজম করতে সমস্যা হতে পারে। এজন্য আইবিএস এর রোগীরা কিসমিস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

দাঁতের সমস্যা আছে এরকম ছোট বাচ্চাদের কিসমিস খাওয়া থেকে বিরত  রাখতে হবে। কারণ কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে চিনি রয়েছে যা বাচ্চাদের দাঁতে আটকে গেলে পাশাপাশি এই চিনির কারণে বাচ্চাদেরকে বেটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

যাদের কিডনির সমস্যা আছে, তারা কিসমিস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ কিসমিসে যেসব উপাদান রয়েছ্‌ যেমনঃ পটাশিয়াম।  যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে পটাশিয়াম প্রসেস করতে সমস্যা হতে পারে এজন্য পটাশিয়াম জাতীয় খাবার খাওয়া যায় না। 

 আমার শেষ কথা

 কিসমিস অনেক পুষ্টিকর একটা খাবার। যাদের আয়রনের ঘাটতি রয়েছে পাশাপাশি ক্যালসিয়ামের সমস্যা। তারা প্রচুর পরিমাণে কিসমিস খাওয়ার অভ্যাস করন।  কারন কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং আয়রন রয়েছে।  এবং গর্ভবতী মায়েদেরও কিসমিস খাওয়ালে তাদের রক্তের সমস্যাটাও দূর হয়ে যাবে।

কিসমিস খাওয়ার তেমন একটা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। শুধুমাত্র কিডনির রোগী ডায়াবেটিস এবং আইবিএস এর রোগীদের সমস্যা হতে পারে। এজন্য যাদের আইবিএস রয়েছে বা কিডনির সমস্যা আছে তারা কিসমিস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন অথবা পরিমাণে কম খান।  যতটা হজম করা যায় ততটা কিসমিস খেলে কারো এই সমস্যা হওয়ার কথা না। 





পোস্টটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

আগের পোস্ট পড়ুন পরের পোস্ট পড়ুন
এখনো কেউ কমেন্ট করে নি
কমেন্ট করতে এখানে ক্লিক করুন

এখানে কমেন্ট করুন

comment url