কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা

কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা নিয়ে এই পোস্টে সম্পূর্ণ বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। আমরা কলা খাওয়ার পরে কলার খোসা ফেলে দিই। কিন্তু আপনারা অনেকেই জানেন না যে কলার খোসা রূপচর্চায় অনেক ভালো কাজ করে থাকে। এবং কলার খোসা ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। 

কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা

এই পোস্টে কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা থেকে শুরু করে কলার খোসা কিভাবে ব্যবহার করবেন এবং কি কি উপকারিতা রয়েছে এই সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করব। যারা কলার খোসার ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চান তারা অবশ্যই এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়বেন। তাহলে কলার খোসার ব্যবহার এবং উপকারিতার সম্পর্কে ভালো ধারণা পেয়ে যাবেন। 

কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা 

কলা অনেক উপকারী এবং স্বাস্থ্যকর ফল। আমরা কমবেশি সবাই প্রায় প্রতিদিনই কলা খেয়ে থাকি। কলা দিয়ে তরকারি রান্না করেও আমরা খেতে পারি এবং পাশাপাশি নানা ধরনের পাকা কলা আমরা সাধারণ এমনিতেই খেয়ে থাকি। এবং কলা পাউরুটি আমাদের একটা অনেক ভালো এবং স্বাস্থ্যকর খাবার। আমরা তো প্রায় সকলেই কলা খায় কিন্তু খোসা কি করি ফেলে দিই তাই না কারন আমরা খোসার উপকারিতা সম্পর্কে জানি না।

কলার খোসায় যে কি পরিমান এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন পাওয়া যায় যা আমাদের ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। আমরা কলার খোসা সঠিকভাবে ব্যবহার করলে আমাদের মুখের ত্বকের নানা দাগ এবং খসখসে ত্বক ভাব দূর করতে পারবো। পাশাপাশি দাঁত পরিষ্কার করার ক্ষেত্রেও কলা অনেক কার্যকরী একটা পদ্ধতি। এখন একটু ধারণা দিলাম কিন্তু নিচে এই বিষয়ে একদম সম্পূর্ণ আলোচনা করব। তো চলুন আলোচনা করা যাক-

কলার খোসার উপকারিতা 

  • ব্রণ ও দাগ দূর করতে:  ব্রণ দূর করতে কলার খোসা ব্যবহার করা অনেক কার্যকরী একটা পদ্ধতি। ব্রণ এবং মুখের দাগ দূর করতে প্রথমে একটা ভালো কলার খোসা নিয়ে আলতো করে কলার ভিতরের সাইট দাগ এবং ব্রনের জায়গায় আস্তে আস্তে ঘষতে হবে। এভাবে পাঁচ থেকে সাত মিনিট ঘোষুণ এবং পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কয়েকদিন ঘষলে মুখের দাগ এবং ব্রণ দূর হবে। 
  •  ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে:  কলাতে যেমন স্বাস্থ্য করি ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান পাওয়া যায় পাশাপাশি কলার খোসাতেও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং ই থাকে। যা আমাদের ত্বককে হাইড্রেড করে  এবং এর উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। এবং খোসাতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের মৃত কোষগুলোকে জীবিত করতে সাহায্য করে। এভাবে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি হয়। 
  • ত্বক মসৃণ করে:  যাদের ত্বকে খসখসে এবং চড়চড়ে ভাব দেখা যায়। তারা নিয়মিত কলার খোসা ব্যবহারের ফলে তাদের ত্বক অনেক নরম এবং মসৃণ হবে। ত্বক আগে থেকে অনেক বেশি সুন্দর হবে। 
  • য়সের ছাপ কমাতে:   যাদের অল্প বয়সেই অনেক ধরনের মানসিক চাপ পাশাপাশি বেশি কাজের চাপের ফলে মুখে কালো দাগ এবং বয়সের ছাপ পড়ে যায় তারা নিয়মিত কলা খোসা ব্যবহার করলে তাদের মুখের কালো দাগ এবং বয়সের ছাপ দূর হবে। 
  • পোকামাকড়ের কামর জনিত ফোলা ভাব ও চুলকানি:  পোকামাকড় বিশেষ করে মশা, মাছির কামোড়ের ফলে ত্বকের কোন জায়গায় যদি ফুলে যায় অথবা চুলকানি কিংবা দাগের সৃষ্টি হয় তাহলে কলার খোসা ব্যবহারে আপনার চুলকানি এবং দাগ দূর হবে। 
  • হজমশক্তি ও মানসিক শান্তি:   কলার খোসায় থাকা এক ধরনের উপাদান যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং এটা মানসিক শান্তি প্রদান করে থাকে। এজন্য মানসিক চাপে থাকলে কলার খোসা সিদ্ধ করে চা বানিয়েও খেতে পারেন। এবং এটা মানসিক শান্তির পাশাপাশি হজমশক্তি বৃদ্ধি করবে। 

কলার খোসার কিছু ব্যবহার বিধি 

  • কলার খোসা ও মধুর মিশ্রণ: ত্বকের কালচে দাগ এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার জন্য কলার খোসার সাথে মধু দিয়ে প্যাক বানিয়ে এটা ব্যবহার করতে পারেন। কলার খোসার ভেতরের অংশ নিয়ে মধুর সাথে মিক্স করে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। 
  • কলার খোসা ও হলুদের ব্যবহার:  কলার খোসার সাথে হলুদ মিশিয়ে ত্বকের উপকারি একটা প্যাক তৈরি করা যায়। এবং হলুদে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিসেপ্টিক উপাদান পাওয়া যায় যা ত্বকের কোন সংক্রমণ রোগ দূর করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি কলার খোসা ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি এবং নানা ধরনের দাগ দূর হবে। 
  • অ্যালোভেরার সাথে কলার খোসা: অ্যালোভেরার প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে খুবই উপকারী। এবং এটা কলার খোসার সাথে ব্যবহার করার ফলে দুটোর উপকারি গুণ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ত্বকের সুন্দর সুস্থতা বজায় রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 
  • জুতা এবং আসবাবপত্র পরিষ্কার: কলার খোসা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জুতা পরিষ্কার এবং চকচকে করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এবং নানা ধরনের কাঠের আসবাবপত্র ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও কলার খোসা অনেক কার্যকরী একটা পদ্ধতি হতে পারে। বাড়ির আসবাবপত্র ময়লা হয়ে গেলে তখন কলার খোসা দিয়ে পরিষ্কার করতে পারবেন। 
  • গাছের জন্য সার হিসেবে: কলা খাওয়ার সময় কলার খোসা একটা নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে এটা বাগানের বিভিন্ন গাছের প্রাকৃতিক সার হিসেবে কাজ করতে পারে। কারণ কলাতে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম এবং ফসফরাস গাছের বৃদ্ধিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য কলার খোসা ছোট ছোট বাগানে ব্যবহার করতে পারবেন। 

দাঁত চকচকে করতে কলার খোসা ব্যবহার 

এতক্ষণ কলার খোসার উপকারিতা এবং ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করলাম। তবে কলার খোসা ব্যবহার সম্পর্কে আরেকটা বাকি রয়েছে। এটা হচ্ছে দাঁত পরিষ্কার এবং ঝকঝকে করতে। যাদের দাঁত হলুদের মত এবং অপরিষ্কার তারা দাঁতে কলার খোসা ব্যবহার করলে দাঁত অনেক সুন্দর এবং ঝকঝকে হয়ে যাবে। আপনি যদি আপনার দাঁতের বাজে পরিবেশের কারণে যেখানে সেখানে যেতে সমস্যায় ভোগেন তাহলে আপনি ঘরে বসেই খুব সহজেই দাঁত একদম সাদা ফটফটে করে ফেলতে পারবেন।

দাঁত সাদা করার জন্য আপনাকে প্রথমে ভালো পরিষ্কার পাকা কলার খোসা নিতে হবে। এবং ব্রাশ করার পূর্বে কলার খোসার ভিতরের অংশ দিয়ে আপনার দাঁতে ১০ থেকে ১০ মিনিট ঘষুন। আস্তে আস্তে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ঘষার পর সাধারণ ব্যবহার করা পেস্ট দিয়ে হালকা ভাবে ব্রাশ করে নিন। এবং ব্রাশ করার পর মুখ ধুয়ে নিলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার দাঁতের পরিবর্তন। 

কলার খোসার উপকারিতা 

  • বিষাক্ত রাসায়নিক: কলা উৎপাদনে প্রায়ই কীটনাশক এবং রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়ে থাকে যার ফলে কলার খোসায় যদি পে করা ওষুধ লেগে থাকে সেটা ব্যবহারের ফলে ত্বকের অনেক বড় ক্ষতিসাধন হতে পারে। এজন্য কলার খোসা ব্যবহারের সময় অবশ্যই দেখে নেবেন যে খোসায় ওষুধ লেগে আছে নাকি এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নাকি। 
  • এলার্জি ভাব:  এটা সবার ক্ষেত্রে হয়না তবে কিছু মানুষের ত্বক কলার খোসার ব্যবহারের ফলে চুলকানি এবং লালচে ভাব সৃষ্টি হতে পারে। একটু খেয়াল করবেন কলার খোসা ব্যবহারের ফলে যদি চুলকানি এবং লালচে ভাব দেখা দেয় তাহলে এই কলার খোসা ব্যবহার আপনার ত্বকের জন্য সঠিক হবে না। 
  • ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ:   তোকে কলার খোসা ব্যবহারের পূর্বে আপনাকে অবশ্যই এই বিষয়টি খেয়াল করতে হবে যে কলায় কোন পোকা মাকড় আছে কিনা এবং কলাটা নষ্ট না ভালো। এই বিষয়টা খেয়াল করে একদম ভালো কলা থেকেই কলার খোসা নিয়ে ব্যবহার করতে হবে। 

লেখকের শেষ কথা 

কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা বিষয়ে এতক্ষন আলোচনা করলাম। এটা অনেক সহজলভ্য এবং সাধারণ একটা ফেসিয়াল প্যাক হতে পারে যা আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ত্বক মসৃণ করবে এবং ত্বকের স্বাভাবিক স্বাস্থ্য বজায় রাখবে। এবং পাশাপাশি এটা দাঁতের জন্য অনেক ভালো দাঁত পরিষ্কারের জন্য ব্যবহার করতে পারেন। 

কলার খোসায় অনেক উপকারী উপাদান এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আপনার ত্বকের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আর কলার খোসায় তেমন একটা ক্ষতিকর পদার্থ নেই। এটা যদি কীটনাশক মুক্ত হয় তাহলে খুবই ভালো। আর পোকা লাগা কলা নেয়া থেকে বিরত থাকুন পরিষ্কার কলার খোসা ব্যবহার করুন।

পোস্টটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

আগের পোস্ট পড়ুন পরের পোস্ট পড়ুন
এখনো কেউ কমেন্ট করে নি
কমেন্ট করতে এখানে ক্লিক করুন

এখানে কমেন্ট করুন

comment url