করলার উপকারিতা ও অপকারিতা
করলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে এই পোস্টে সম্পূর্ণ বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। আমরা কমবেশি সবাই করনার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানি। তুমি কিছু মানুষ হয়তোবা সম্পূর্ণ বিস্তারিত নাও জানতে পারে।
করলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে যারা একদম সম্পূর্ণ জানেনা তাদের জন্য এই পোস্ট এবং আপনি যদি একটু একটু জেনে থাকেন তাহলে এই পোস্টটি করতে পারেন আপনার সম্পূর্ণ বিষয় ধারণা পেয়ে যাবেন। পড়ালেখা প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান এবং ভিটামিন রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেকে উপকারী। এজন্য আমাদের সঠিক নামে করলা খাওয়া উচিত।
সুচিপত্রঃ করলার উপকারিতা ও অপকারিতা
- করলার উপকারিতা ও অপকারিতা
- করলার উপকারিতা সমূহ
- করলার অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক
- করলা খাওয়ার সঠিক নিয়ম
- করলা খাওয়ার পদ্ধতি
- লেখকের শেষ কথা
করলার উপকারিতা ও অপকারিতা
করলা এক ধরনের তিক্ত স্বাদের শাকসবজি যা সাধারণ এশিয়ার দেশগুলোতে অনেক প্রচলিত। করলাতে রয়েছে নানা ধরনের পুষ্টিগুণ এবং ভিটামিন। যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এবং করলাতে রয়েছে নানা ধরনের শক্তি উৎপাদন মিনারেলস। বাংলাদেশে করলা অনেক পরিচিত এবং এটার চাহিদা অনেক বেশি। বাংলাদেশের কমবেশি সব জায়গাতেই করলা আমদানি হয় এবং এটা পাওয়া যায়। করার কিছু বিশেষ পুষ্টি গুণের কারণে করলার এত চাহিদা।
করলাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে পাশাপাশি উচ্চমানের ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এবং আমাদের দেহে করলা খাওয়ার ফলে নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে। যা আমাদের সুস্থ রাখতে খুব কার্যকরী। করলা আর নানা ধরনের মৌসুমি রোগ ত্বকের সুরক্ষা এবং ক্যান্সার এই ধরনের নানারূপ রোগ প্রতিরোধ কাজে সহায়তা করে থাকে।
তবে করোলার তিক্ত স্বাদের কারণে সবাই করোনা খেতে পারে না। এবং করলাতে উচ্চমানের ভিটামিন এবং খনিজ মিনারেলসের পাশাপাশি কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে যা আমাদের সবার জানা প্রয়োজন। এবং করলার কারণে কোন সব সমস্যা সৃষ্টি হয় এ বিষয় নিয়ে এই প্রশ্নের সম্পূর্ণ আলোচনা করা হবে।
করলার উপকারিতা সমূহ:
১) ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে করলা খাওয়া খুবই উপকারী। ডায়াবেটিকস রোগীদের নিয়মিত করোলা ক্ষার অভ্যাস তৈরি করা উচিত কারণ এর তিক্ততা ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণ করতে সহযোগিতা করে থাকে। করলা রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ কমাতে সহায়তা করে এতে থাকা কিছু উপাদানগুলি ইনসুলিন এর কার্যক্ষমতা বাড়ায় যার ফলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সুবিধা হয়।
২) হজমের উন্নতি
করলা এক ধরনের সবজি আর সবজি আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। করলাম পেটের মধ্যে গ্যাস ও অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এবং এর তিক্ত তা পেটের ক্ষুধা বাড়াতে সাহায্য করে,আমাদের রুচি বৃদ্ধি করে।
৩) ওজন কমাতে করলা
করলা কম ক্যালোরিযুক্ত স্বাস্থ্যকর ভিটামিন এ ভরপুর। এবং এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। করলা কে কম ক্যালোরিযুক্ত হওয়ার পাশাপাশি এটি শরীরের অতিরিক্ত চর্বি পুড়িয়ে মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে তাহলে আপনার দ্রুত ওজন কমে যায়।
৪) মৌসুমি রোগ প্রতিরোধ
করলাতে উচ্চ মানের এন্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় ।ভিটামিন সি এবং ফাইটোকেমিকালস সমৃদ্ধ যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এজন্য নানা ধরনের মৌসুমী রোগ সর্দি-কাশি ফিবার এগুলো থেকে খুব সহজেই আমরা নিরাপদে থাকতে পারি।
৫) আনসার প্রতিরোধ
করলা কিছু বিশেষ উপাদান যেমন লাইক টিম এবং ভিটামিন সি ধারণ করে এবং করলাতে এ ধরনের উপাদান প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় যা আমাদের শরীরের ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে এবং ক্যান্সারের রোগকে ধ্বংস করে দেয়। বিশেষ করে এটি লিভার এবং স্তন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
৬) শরীর শোধন
করলা রক্তের অপ্রয়োজনীয় টক্সিন দূর করে এবং শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে যা আমাদের শরীরের লিভারের কাজকে উন্নত করে এবং শরীর পরিষ্কার রাখে।
৭) ত্বকের যত্ন
কেরালাতে উচ্চ মানের ভিটামিন থাকার কারণে এটি আমাদের শরীরের ত্বককে ভালো রাখতে খুবই সাহায্য করে থাকে। করলার এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুনাগুন ত্বকের সমস্যা যেমন, ইত্যাদি নানা ধরনের ত্বকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
৮) হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্য
করলা শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। যা আমাদের হৃদপিন্ডের নানা ধরনের সমস্যার ঝুঁকি কমায় এবং হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখে। এজন্য হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখার জন্য আমাদের নিয়মিত করলা খাওয়া উচিত।
করলার অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক
আমরা এতক্ষণ করলা নানা রকম পুষ্টিগণ এবং উপকারীর দিক সম্পর্কে আলোচনা করলাম। তবে করলাতে পুষ্টি থাকার পাশাপাশি এই অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে শরীরে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। এখন এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাক।
*গর্ভাবস্থায় বিপদ
করলাতে নানা পুষ্টিগণ রয়েছে তবে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এটা অনেক সময় বিপদের কারণ হতে পারে। এটি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে জরায়ুর সংকোচন সৃষ্টি করতে পারে একটা গর্ভবতী মায়েদের জন্য অনেক বড় ঝুঁকির কারণ। তাই গর্ভবতী অবস্থায় করলা খাওয়ার ব্যাপারে একটু সচেতন থাকতে হবে।
*নিম্ন রক্তচাপ
যাদের রক্তচাপ সব সময় নিচু পর্যায়ে থাকে তাদের করলা খাওয়া থেকে সাবধান থাকতে হবে। কারণ করলা স্বাভাবিকভাবে রক্তচাপ তোমাদের সাহায্য করে, যা হাইপোটেনশন সমস্যা থাকা ব্যক্তিদের জন্য বিপদজনক হতে পারে। এজন্য নিম্ন রক্তচাপের রোগীদের করলা খাওয়া থেকে সাবধানে থাকতে হবে।
*অতিরিক্ত খেলে সমস্যা
করলা যেহেতু উচ্চ মানের পুষ্টি উপাদানের ভরপুর ।এজন্য আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণ করলা খেয়ে ফেলেন তাহলে এটা হজম করতে সমস্যা হতে পারে। যেমন পেটের গ্যাস, বমি বা ডায়রিয়া পাশাপাশি নানা গন্ডগোল সৃষ্টি হতে পারে।
*ইনসুলিনের প্রভাব
করলা ইনসুলিন এর কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। তবে ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় যদি ইনসুলিন বা অন্যান্য ওষুধ ব্যবহার করা হয়। তবে করলা গ্রহণের ফলে রক্তের শর্করা অত্যাধিক কমে যেতে পারে। এজন্য ইনসুলিন ব্যবহারের সময় ডায়াবেটিকস রোগীদের করলা খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।
*করলা নানা ধরনের চুলকানি এবং চর্ম রোগ আরোগ্য করতে সাহায্য করে তবে কিছু লোক করলার প্রতি অ্যালার্জি প্রদর্শন করতে পারে বা কিছু লোকের শরীরে এলার্জি সৃষ্টি হতে পারে। যাদের করলা খেলে এলার্জি হবে তারা খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
*কিডনির সমস্যা
যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য করোলা খাওয়া অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কারণ টিকিটের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। যার ফলে আপনি কিডনির সমস্যায় ভুগে থাকলে করলা থেকে বিরত থাকুন।
*অস্বস্তিকর স্বাদ
করলা যেহেতু একটা তিক্ত সবজি। এজন্য অনেকের কাছে এটা খেতে সমস্যা হতে পারে। কারণ সবার তিক্ত খাবার পছন্দ না।
করলা খাওয়ার সঠিক নিয়ম
১. করলার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা:
বেশি পরিমাণে খাওয়া: করলা অত্যন্ত তিক্ত স্বাদের হওয়ায়, এটি অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়। ডায়াবেটিস বা অন্যান্য সমস্যা থাকলে দিনে ১টি মাঝারি আকারের করলা যথেষ্ট হতে পারে।
প্রথমে অল্প পরিমাণে খাওয়া: যদি আপনি করলা নতুনভাবে খাচ্ছেন, তাহলে প্রথমে অল্প পরিমাণে খেয়ে দেখুন, কারণ কিছু মানুষের করলা খাওয়ার পরে হজমে সমস্যা বা অ্যালার্জি হতে পারে।
২. করলা খাওয়ার সঠিক সময়:
খাওয়ার পরিপূর্ণ সময়: করলা সকালে খাওয়ার জন্য ভালো, বিশেষ করে যদি আপনি ডায়াবেটিস বা হজম সমস্যা নিয়ে কাজ করছেন। সকালে করলা খেলে এটি রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
খালি পেটে খাওয়া: খালি পেটে করলা রস বা স্যুপ খাওয়া অত্যন্ত উপকারী হতে পারে, কারণ এটি ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। তবে, যদি আপনার পেট দুর্বল থাকে, তবে খাবারের পর এটি খাওয়া ভালো।
৩. করলার তিক্ততা কমানো:
নুন দিয়ে রাখুন: করলার তিক্ততা কমানোর সবচেয়ে প্রচলিত উপায় হল, করলা কেটে নুন দিয়ে ২০-৩০ মিনিট রেখে দেয়া। এর ফলে করলার তিক্ততা অনেকটা কমে যায়। এরপর করলা ধুয়ে ভালো করে পানি ঝরিয়ে নিন।
চিনি বা মধু যোগ করুন: যদি করলার তিক্ততা অতিরিক্ত মনে হয়, তবে এর সাথে চিনি বা মধু মেশালে তিক্ততা কিছুটা কমবে এবং খেতে সহজ হবে।
মশলা দিয়ে রান্না করুন: করলা রান্না করার সময় আপনি মশলা যেমন হলুদ, জিরা, কালোজিরা, মেথি, লংকা ইত্যাদি যোগ করলে তিক্ততা কমানোর পাশাপাশি সুস্বাদুও হবে।
করলা খাওয়ার পদ্ধতি:
করলা রস (Juice): করলার রস খাওয়ার জন্য করলা ধুয়ে কেটে ভেতরের বীজগুলো ফেলে দিতে হবে। তারপর ব্লেন্ডারে রস তৈরি করে খাওয়া যেতে পারে। তবে, প্রথমে মধু বা লেবু যোগ করলে তিক্ততা অনেকটাই কমানো সম্ভব।
করলা ভাজি: করলা ভাজি বা করলার তরকারি তৈরি করার সময় তাতে তেল কম ব্যবহার করুন, কারণ অতিরিক্ত তেল বা মশলা করলার পুষ্টিগুণ নষ্ট করতে পারে।
ভাপানো বা সেদ্ধ: করলা ভাপিয়ে বা সেদ্ধ করেও খাওয়া যেতে পারে। এটি খাওয়ার জন্যও খুবই উপকারী কারণ এতে পুষ্টিগুণ অনেকটা বজায় থাকে।
লেখকের শেষ কথা
করলা একটা উচ্চ মানের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সবজি। এটা নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করার ফলে আপনার শরীরের নানা উপকারিতা আসবে এবং আপনার নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হবে। তবে কোন জিনিসই অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে আমাদের উপকারের চেয়ে অপকার বেশি হয়ে থাকে। এজন্য করো না খাওয়ার সময় যতটা হজম করা যায় তদ অনুযায়ী অল্প করে খাওয়ার চেষ্টা করুন।
করলার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে এই পোস্টে একদম সুন্দর করে আমি আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। করলা খাওয়ার ফলে যাদের এ ধরনের সমস্যা দেখা দিবে তারা করলা খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। অথবা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাবেন। এবং সঠিক নিয়মে করলা খেয়ে সুস্থ থাকুন।
এখানে কমেন্ট করুন
comment url